ভারতীয় সিনেমার প্রথম ‘সুপারস্টার নায়িকা’ হিসেবে যাকে গণ্য করা হয়, সেই শ্রীদেবীর শেষকৃত্য মুম্বাইতে রাষ্ট্রীয় মর্যাদায় সম্পন্ন হয়েছে।
এদিন দুপুর পর্যন্ত তার মরদেহ শায়িত ছিল শহরের একটি স্পোর্টস ক্লাবে – সেখানে তাকে শেষ শ্রদ্ধা জানাতে ভিড় করেছিলেন অগণিত মানুষ। বলিউড ও দক্ষিণী সিনেমার বহু নামী তারকাও এসেছিলেন তাকে শেষবারের মতো দেখতে।
এর আগে শনিবার রাতে দুবাইয়ের একটি হোটেলে ৫৪ বছর বয়সী শ্রীদেবী মারা যান।
ফরেনসিক রিপোর্টে জানানো হয় দুর্ঘটনাবশত বাথটাবের জলে ডুবে তার মৃত্যু হয়েছে।
আশির দশকে একটা যুগ ছিল, যখন দক্ষিণী নায়িকা শ্রীদেবীর প্রেমে পড়েছিল প্রায় গোটা ভারত।
হিন্দি, তামিল, তেলুগু ইত্যাদি নানা ভাষায় প্রায় আড়াইশোরও বেশি ছবি করে হঠাৎ তিনি একদিন সিনেমার দুনিয়া থেকে স্বেচ্ছা-অবসরে চলে যান।
পনেরো বছর বাদে অল্প অল্প করে আবার বলিউডে ফিরে আসছিলেন ঠিকই, কিন্তু দুবাইতে আকস্মিক মৃত্যু তাকে কোটি কোটি ভক্তের কাছ থেকে চিরতরে ছিনিয়ে নিয়ে গেল।
শ্রীদেবীর কম বয়সের বিখ্যাত ছবি সাদমা-র নায়ক কামাল হাসান তার স্মৃতিচারণ করতে গিয়ে বলেছেন, আজ যেন সেই ছবির ঘুমপাড়ানিয়া গানটাই শুধু মনে ঘুরেফিরে আসছে।
গতমাসে দু’জনের হঠাৎ করে দেখাও হয়েছিল – শিল্পীরা সচরাচর বাইরে খুব একটা আবেগ দেখান না, কিন্তু দুজনেই সেদিন পরস্পরকে আলিঙ্গন করেছিলেন।
কামাল হাসান তো তবু শ্রীদেবীর সহ-অভিনেতা, কিন্তু তাকে যারা ব্যক্তিগতভাবে চেনেন পর্যন্ত না, তেমন হাজার হাজার মানুষও এদিন মুম্বাইয়ের সেলিব্রেশন স্পোর্টস ক্লাবে প্রিয় নায়িকাকে চোখের জলে শেষ বিদায় জানিয়েছেন।
সুদূর অন্ধ্রপ্রদেশ, কর্ণাটক বা শ্রীদেবীর নিজের রাজ্য তামিলনাড়ু থেকেও এসেছিলেন অনেকেই।
ভোররাত থেকেও অনেকে অপেক্ষা করছিলেন নায়িকাকে একবার শেষবার চোখের দেখা দেখবেন বলে।
লাল শাড়িতে মোড়ানো ছিল তার মরদেহ, আর চারপাশটা সাজানো ছিল নায়িকার সবচেয়ে পছন্দের রং সাদায়।
বলিউডে শ্রীদেবীর প্রথম হিট ছবি হিম্মতওয়ালার নায়ক, প্রবীণ অভিনেতা জিতেন্দ্রই যেন অগণিত ভক্তর মনের কথাটা বলছিলেন: “শ্রীদেবীর তো এখনও যাওয়ার সময় হয়নি। এত কম বয়সে, বড্ড তাড়াতাড়িই যেন তিনি চলে গেলেন।”
হেমামালিনী, রেখার মতো সতীর্থ অভিনেত্রী কিংবা বলিউডের আরও সব দিকপালরা প্রায় সবাই ছিলেন সেই স্তব্ধ শোকমিছিলে।
যেমন অনুপম খেরের কথায়, “শ্রীদেবীকে নিয়ে ‘ছিলেন’ করে বলতে হবে এটা কখনও ভাবিনি।”
শ্রীদেবীর বিখ্যাত ছবি মিস্টার ইন্ডিয়ার কোরিওগ্রাফার সরোজ খান আবার বলছিলেন, তিনি আজ আরও একবার সন্তান হারানোর শোক পেলেন।
ক্রিকেট তারকা সাচিন তেন্ডুলকরও এসেছিলেন যেন সেই প্রজন্মের প্রতিনিধি হয়ে, যাদের কৈশোর আর যৌবন কেটেছে শ্রীদেবীর একের পর এক ব্লকবাস্টার ছবি দেখে।
বিকেল সাড়ে তিনটে নাগাদ ভারতের তেরঙ্গা জাতীয় পতাকায় মুড়ে শ্রীদেবীর মরদেহ নিয়ে যাওয়া হয় ভিলে পার্লে ক্রেমেটোরিয়ামে।
শববাহী ওই ট্রাকের সামনে ও দু’পাশে ছিল নায়িকার বিশালাকার পোর্ট্রেট, আর চলন্ত গাড়ির পাশ দিয়ে কাঁদতে কাঁদতে ছুটছিলেন অসংখ্য মানুষ।
বিকেল সাড়ে পাঁচটার মধ্যেই সম্পূর্ণ রাষ্ট্রীয় মর্যাদায় ও হিন্দু রীতিতে তার অন্তিম সংস্কার সম্পন্ন হয়।
শ্রীদেবীকে শ্রদ্ধা জানাতে নিজের গলায় ‘কভি আলবিদা না কাহনা’ গানটি গেয়ে সোশ্যাল মিডিয়াতে পোস্ট করেছেন মালয়ালি কিশোরী প্রিয়া প্রকাশ ভারিয়ার – মাত্র দু’সপ্তাহ আগে ভ্যালেন্টাইনস ডে-তে একটি ভিডিও ক্লিপের সুবাদে যিনি রাতারাতি দেশজোড়া পরিচিতি পেয়েছেন।
সূত্র, বিবিসি